
বর্ণময় সন্ধ্যায় সম্মানিত করে টেলি শিল্পীদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী
পরিযায়ী ভট্টাচার্য
রাজ্যের শিল্পী ও কলাকুশলীদের উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ করেছেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিল্পীদের স্টুডিও গড়তে জমি দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। শিল্পীদের কাজকে সম্মান জানাতেও চালু করা হয়েছে একাধিক পুরস্কার। তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড টলিপাড়ার শিল্পীদের জুগিয়েছে উৎসাহ।
নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত সপ্তম টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডয়ের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগে সেরাদের হাতে জননেত্রী নিজের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। “টেলিভিশন পর্দায় যারা সারা বছর ধরে কাজ করে আমাদের আনন্দ দিয়ে থাকে এবং বাংলার সংস্কৃতিকে যারা গর্বিত করে তাদের আমরা পুরস্কৃত করলাম। টেলিভিশনে আজকাল মানুষ কিন্তু খবর দেখার চাইতেও অনেক বেশি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলো দেখেন। সেই ক্ষেত্রে বলতে পারেন, আপনাদের কত যে গুণমুগ্ধ মানুষ আছে আমি ঠিক জানি না! তবে আমি কিন্তু একজন ভীষণ গুণমুগ্ধ। আমি কিন্তু নিজে সবসময় দেখি। সুযোগ না পেলে মধ্যরাতে দেখি। যখন মানুষ মধ্যরাতে ঘুমায়, তখন আমি কিন্তু এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াই। কোন টেলিভিশন চ্যানেলে কী হচ্ছে আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখি। কে কী পাঠ করছে আমি কিন্তু দেখি। কারণ আমি দেখতে ভালবাসি।”-পুরস্কার মঞ্চ থেকে এভাবেই টেলি অ্যাকাডেমির অভিনেতা- অভিনেত্রীদের উৎসাহিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চলতি বছর ‘টেলি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড’-এ শ্রেষ্ঠ সিরিয়ালের আসন ছিনিয়ে নিয়েছে ‘ফাগুন বউ’। আর সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিয়ালের শিরোপা পেয়েছে জি বাংলার হাই টিআরপি-প্রাপ্ত সিরিয়াল ‘কৃষ্ণকলি’। পাশাপাশি কৃষ্ণকলি ধারাবাহিকের নিখিল এবং শ্যামা পান বেস্ট অনস্ক্রিন কাপল-এর তকমা। রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর শিরোপা অবশ্য একজনের ভাগ্যে জোটেনি। টেলি দুনিয়ার অতি পরিচিত মুখ দিতিপ্রিয়া রায়, মানালি দে এবং ইন্দ্রাণী হালদার, তিনজনেই ভাগ করে নিলেন ওই সম্মান। সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান বিশ্বজিৎ ঘোষ (কে আপন কে পর) এবং সন বন্দ্যোপাধ্যায় (আমি সিরাজের বেগম)। সহ-অভিনেতার সম্মান প্রদান করা হয় রানি রাসমণি খ্যাত গৌরব চট্টোপাধ্যায়কে। কৃষ্ণকলি থেকেই সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নিয়েছেন নিবেদিতা মুখোপাধ্যায় অর্থাৎ নিখিলের মা। একই বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছেন ‘কলের বউ’ খ্যাত রূপসা চক্রবর্তীও। সেরা সংলাপ-এর জন্য পুরস্কার জিতে নিয়েছেন করুণাময়ী রানি রাসমণির অঞ্জন চক্রবর্তী। আর শ্রেষ্ঠ খলনায়িকা পান ‘রাণু পেল লটারি’-র স্বাগতা মুখোপাধ্যায়। স্টার জলসার ‘দেবী চৌধুরানী’ সিরিয়ালের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান পেলেন অমিত সেনগুপ্ত। সেরা শিশুশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছে চার খুদে শিল্পী। অরণ্য রায়চৌধুরী (জয় বাবা লোকনাথ), পৃথা ঘোষ (গুড়িয়া), অভিরূপ সেন (গুড্ডু), কৃত্তিকা চক্রবর্তী (রাখিবন্ধন)। শুধু পুরস্কার প্রদানই নয়। আয়োজন করা হয়েছিল বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানেরও। জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর গানের সুরে মাতিয়ে রাখেন গোটা মঞ্চ। মূল সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন অরিন্দম শীল এবং জুন মালিয়া। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন রাজ চক্রবর্তী । সামনেই বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। তাই এদিনের মঞ্চে দুর্গারূপে দেখা যায় নায়িকা শুভশ্রীকে।
টেলি অ্যাকাডেমির মঞ্চে টেলি তারকাদের পাশাপাশি পুরস্কৃত করা হল রাজ্য সরকারের তিন দফতরকে। পুরস্কৃত করা হল স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের বিশেষ প্রদর্শনের জন্য। শুক্রবার নজরুল মঞ্চে সম্মান প্রাপকদের হাতে সেই পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোটর সাইকেলের বিশেষ কর্মকূশলতা প্রদর্শনের জন্য ‘টর্নেডো টিম’ এবং ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’ -এর সচেতনতামূলক প্রচারের জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে এদিন পুরস্কৃত করেন মুখ্যমন্ত্রী। চমকপ্রদ প্রদর্শনের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ বিভাগ এবং পরিবেশ দফতরকেও। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে দৃষ্টিনন্দন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় রাজ্যের পাঁচ স্কুলকে। বীরভূম এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাশাপাশি পুরস্কারের তালিকায় ছিল শহরের তিন স্কুল।
This post is also available in: English