
দেউচা পাঁচামি কয়লা খাদানে বিনিয়োগ ১২ হাজার কোটি
রানার চক্রবর্তী
দেউচা পাঁচামিতে কয়লা খাদান তৈরির প্রকল্প তৈরির পর শুধু রাজ্য নয়, দেশেও কয়লার অভাব থাকবে না। স্থানীয় মানুষ তো বটেই, লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হবে। প্রথমেই বিনিয়োগ হবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়বে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাখনি হিসাবে গড়ে তোলার সম্পূর্ণ পরিকল্পনা তৈরি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তবে স্থানীয় মানুষের সুযোগ-সুবিধার কথা মাথায় রেখেই কাজে হাত দেবে রাজ্য। মা-মাটি-মানুষের সরকার গুরুত্ব দেবে মানুষের কাছেই। প্রকল্প তৈরিতে অর্থাৎ কয়লা উত্তোলনে বিশ্বের সেরা বিশেষজ্ঞ ও সংস্থাকে কাজে লাগানো হবে। নবান্নে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এই তথ্য জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। ১১ টি মৌজা এলাকায় প্রায় ১১,২২২.৫ একর জমি জুড়ে তৈরি হবে এই কয়লা খাদান। ওই খাদান থেকে উত্তোলন করা যাবে ২১০২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা যা আগামী ১০০ বছরের কয়লার চাহিদা মিটিয়ে দেবে, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বীরভূম-সহ দক্ষিণবঙ্গের অর্থনীতির চিত্রটাই বদলে যাবে। এগিয়ে যাবে বাংলা। দেশের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবে বাংলাই।
বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা কয়লাখনি প্রকল্পের ‘ক্ষমতা’ রাজ্যের হাতে থাকা নিয়ে গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে টালবাহানা ছিল। অন্তত ছ’টি রাজ্য এই বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। কেন্দ্রকে বহুবার আর্জি জানিয়েছে বাংলা। মুখ্যমন্ত্রী নিজে চিঠি লিখেছিলেন। দিন পনেরো আগে কেন্দ্রের কয়লামন্ত্রকের চূড়ান্ত অনুমোদন আসে। কয়লা খনির কাজ শুরুর বিষয়ে সবুজ সংকেত দেয় কেন্দ্র। আগামী সপ্তাহেই মউ সই হওয়ার কথা। মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন, “অনেকে চায় না প্রকল্প হোক। ভুল বার্তা দেবেন না। বিশ্বের অর্থনীতিও বাংলাকে কেন্দ্র করে চালিত হবে।” তাঁর বক্তব্য, “ঠিক করেছি, এখনই কাজ শুরু করব না। প্ল্যানিং ও ম্যাপ করা হবে। পুরোটাই সেরা লোকদের দিয়ে করানো হবে। তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিতে রাজি নই। যেন কোনও অভাব না হয়। সব দিক দেখেই প্রকল্প করা হবে। লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হবে। বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান তো বটেই, হুগলি, পশ্চিম মেদিনিপুর, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মানুষও ভীষণভাবে উপকৃত হবেন। কারিগরি প্রশিক্ষিত বা কম লেখাপড়া জানা মানুষ, আদিবাসী, সংখ্যালঘু সাধারণ সম্প্রদায়ের মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেন। এটা শপথ। পাঁচ বছরের কর্মযজ্ঞের পর কয়লা যজ্ঞ শুরু হবে।” স্থানীয় মানুষকে সঙ্গে নিয়েই ও তাঁদের যুক্ত করে প্রকল্পের কাজ শুরু করবে রাজ্য। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি যেমন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ-সহ উপযুক্ত সেরা সংস্থাকে দিয়ে কাজ করাবে, তেমনই স্থানীয়স্তরে কমিটি মানুষের সুবিধা-পরিষেবা ও প্রয়োজনীয়তার কথা খেয়াল রাখবে। এই কমিটিতে থাকবেন আদিবাসীদের প্রতিনিধিও। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও কথা বলবেন। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটির সমীক্ষা রিপোর্ট তিন-চার মাসে মিলবে।
রাজ্য তো বটেই, দেশের কয়লাও অন্য জায়গা থেকে কিনতে হবে না। অভাব হবে না বিদ্যুতের। ২০১৫ সালে মোট ১৭টি কয়লা ব্লককে কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকের তরফ থেকে বন্টন করা হয়। যার মধ্যে দেউচা-পাঁচামি-হরিণশিঙা-দেওয়ানগঞ্জ কয়লাখনিও রয়েছে। সেখানে ২১০২ মিলিয়ন টন কয়লা মজুত আছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রকল্পে পর্যায়ক্রমে মোট ১২ হাজার কোটি টাকা লগ্নি হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। প্রায় ১১ হাজার ২২২.৫ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত দেউচা পাঁচামি কোল ব্লক এলাকায় প্রায় ৩৯৫টি পরিবারের বসবাস। প্রায় ৪০ শতাংশ আদিবাসী।
বৈঠকে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশ-প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট দফতরের শীর্ষ কর্তারা যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র, বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বীরভূম জেলার মন্ত্রী ডঃ আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ সিনহা ছাড়াও ডাকা হয়েছিল সরকারি কমিটিতে থাকা অনুব্রত মন্ডল, বিকাশ রায়চৌধুরী, অভিজিৎ সিনহাকেও। মোট জমির প্রায় ২০০০ একর খাস ও প্রায় ৯ হাজার একর জমি রায়তি। বনভূমির কিছুটা অংশ পড়বে। দূষণের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দরকার। দূষণ নিয়ন্ত্রণে বীরভূমে পৃথক একটি কার্যালয় হবে। কেন্দ্রের কাছে জমা দিতে হবে ৫০ কোটি টাকা। মুলত এই কারণেই ১০০ কোটি টাকা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের থেকে নেবে রাজ্য। পরে কেন্দ্র টাকা ফেরত দিলে ৫০ কোটি দেওয়া হবে।
This post is also available in: English