
হুমকি দিলেও দুর্বৃত্তদের ঠাঁই হবে না বাংলায়
তীর্থ রায়
লোকসভা ভোট এগিয়ে আসতেই বাংলায় এসে কিছু নেতা চিৎকার শুরু করেছেন। নানা রকম হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হুংকার ছাড়া হচ্ছে। বাংলার মানুষের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে এই সব নেতাদের কোনও ধারণাই নেই। বাংলার মাটিতে এই সমস্ত হুংকার-হুমকির যে কোনও প্রভাব নেই, এঁরা বুঝতে পারছেন না। বাংলার মাটি যে দুর্জয় ঘাঁটি, সেই অভিজ্ঞতাও এঁদের নেই। লোকসভা ভোটে বাংলার মানুষ কোনও দুর্বৃত্তকে ঠাঁই দেবে না। যাঁরা স্বপ্ন দেখছেন হুংকার-হুমকি ছেড়ে এই বাংলার আসন দখল করবেন, তাঁরা এখনও কল্পনার রাজ্যে বাস করছেন।
বাংলার রাজনীতি কখনও তার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে পথ চলে না। স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলার রাজনীতির এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য তৈরি হয়েছে। সেই ঐতিহ্যে ভর করেই বাংলার রাজনীতির পরস্পরা তৈরি হয়েছে। আজ বাইরে থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে কেউ কেউ ভাবছেন বিরাট বিপ্লব করে দেবেন। তাঁদের এই হুমকি ও হুংকার যে আসলে বাংলার মানুষকে প্রতি মুহূর্তে অপমান করছে, সেই সত্য এঁরা বুঝতে পারেন না। বাংলায় অতীতে কেউ এইভাবে হুমকি ও হুংকার ছেড়ে রাজনীতির জমি দখল করতে পারেনি। আগামীদিনেও এই পথে বাংলার রাজনীতিতে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব নয়। বাংলার মানুষের সঙ্গে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে লড়াই আন্দোলন করে আজ বাংলার জননেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। বাংলার জননেত্রীর এই লড়াই ছিল দীর্ঘস্থারী। জীবনকে বাজি রেখে, সব ভয়ভীতিকে তুচ্ছ করে বাংলার জননেত্রী বছরের পর রাজ্যের মানুষের দাবিদাওয়া ও অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। তাঁর এই লড়াই ছিল আপসহীন। কখনও কোনও প্রলোভনের সামনে তিনি পা দেননি। কখনও প্রাণের ভয়ে লড়াই থেকে পিছু হঠেন নি। সিপিএম হার্মাদরা ৩৪ বছর ধরে বাংলার জননেত্রীকে ঠেকানোর চেষ্টা করে গিয়েছে। তাঁকে অজস্রবার শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। প্রাণে মেরে ফেলার চক্রান্ত হয়েছে। সবরকমভাবে হার্যাদরা তাঁর উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। তবু বাংলার জননেত্রীকে এক মুহুর্তের জন্য টলানো যায়নি । সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি ছিলেন অবিচল, অনড় দৃঢ়। বাংলার মানুষের বুকভরা ভালবাসা ও আশীর্বাদ নিয়ে তিনি লড়াই-সংগ্রামের সামনের সারি থেকে বছরের পর বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর চেষ্টাতেই লাগাতার আন্দোলনের ফসল হিসাবে বাংলা থেকে উৎখাত হয়েছে হার্মাদ সিপিএমের সরকার। ফলে বাংলার রাজনীতিতে, কোটি কোটি রাজ্যবাসীর হৃদয়ে জননেত্রীর এইভাবে স্থান করে নেওয়া এক দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। হঠাৎ করে বাইরে থেকে এসে হুমকি, হুংকার দিয়ে বাংলার মানুষের হৃদয়ে জায়গা করা যায় না।
লোকসভা ভোটের আরও কয়েক মাস দেরি। কিন্তু এখনই নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায় যে বাংলায় ৪২টি লোকসভা আসনের কোনওটিতেই দুর্বৃত্তদের কোনও জায়গা হবে না। মানুষ জানে, বাংলার মানুষের পাশে কে আছে। বাংলার মানুষের ভালর জন্য কে লড়াই করবে। বাংলার মানুষ লোকসভা ভোটে তাঁর প্রকৃত বন্ধুকে নিশ্চিত করেই চিনে নেবে। অতীতেও বাংলায় দুর্বৃত্তদের মানুষ এইভাবেই শিক্ষা দিয়েছে।
বাংলার রাজানীতিকে বাংলার সংস্কৃতি ও কৃষ্টির থেকে বিচ্ছিন্ন করে যাঁরা দেখার চেষ্টা করছেন তাঁদের ভুল অচিরেই ভাঙবে। এই মাটি রামকৃষ্ণদেবের মাটি। এই রবীন্দ্রনাথের মাটি। বাংলার মানুষ এমন কোনও কাজ করবে না, যা মানবতার মহান আদর্শের বিরোধী। বাংলার মানুষ এমন কোনও কাজ করবে না রামকৃষ্ণদেবের ‘যত মত তত পথ’- এর বিরোধী। বিবিধের মাঝে মিলন মহানের আদর্শ নিয়ে বাংলা এতকাল হেঁটে এসেছে। আগামিদিনেও সে এই পথেই হাঁটবে। মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে, মানুষের সঙ্গে মানুষের লড়াই লাগিয়ে যাঁরা ভোট হাসিল করার কথা ভাবছেন, তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে দেশের অন্য কোনও রাজ্যে ভোট হতে পারে, কিন্তু বাংলায় তা সম্ভব নয়। আমরা গত কয়েক বছর ধরে দেখছি, বিজেপি ও সিপিএমের হার্মাদরা গ্রামেগঞ্জে দাঙ্গা লাগানোর লাগাতার চক্রান্ত করে যাচ্ছে। সিপিএমের যারা হার্মাদ ছিল, তারাই এখন বিজেপির ওস্তাদ হয়েছে। এদের কাজই হল যেকোনও ছুতোয় মানুষের সঙ্গে মানুষের বিরোধ তৈরি করে দেওয়া। মানুষের সঙ্গে মানুষের লড়াই লাগিয়ে দেওয়া। গত কয়েক বছর ধরে বাংলায় এই লড়াই লাগিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করেও অবশ্য হার্মাদরা সফল হয়নি। আগামিদিনেও সফল হবে না। কারণ, বাংলায় জননেত্রীর নেতৃত্বে এক দুর্ভেদ্য লড়াই এই রাজ্যের মানুষ গড়ে তুলেছে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। বাংলার মানুষের লড়াই-সংগ্রাম যতদিন থাকবে, ততদিন বাংলায় কোনও দুর্বৃত্ত কোনও সুবিধা করতে পারবে না। লোকসভা ভোটের ফল বেরোলেই বোঝা যাবে এই দুর্বৃত্তদের দৌড়।
বাংলায় মানুষের চরম শিক্ষার জন্য প্রস্তত থাকতে হবে এই দুর্বৃত্তদের। ভিন রাজ্য থেকে যাঁরা প্রতিদিন এসে বাংলার মানুষকে অপমান করছেন, বাংলার মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন, তাঁরা জানেন যে, লোকসভা ভোটে তাঁদের হার অনিবার্য। ভোটে হেরে গেলে তাঁদের যে আর কখনও বাংলায় আসতে হবে না, সেটাও তাঁদের জানা। সেই কারণে তাঁদের যা খুশি তাই বলতে মুখে আটকাচ্ছে না। কিন্তু এইভাবে তাঁরা দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করছেন। আমাদের রাজনীতির পরম্পরাকে ধ্বংস করছে। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে একটি বিপজ্জনক প্রবণতা। গণতন্ত্রকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে মানুষকে এখনই এইসব সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। গণতন্ত্র বিপন্ন হলে ভারতের ঐক্য ও সংহতি টিকে থাকবে না। গোটা দেশটা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। সিপিএমের হার্মাদ ও বিজেপির ওস্তাদরা সেটাই চাইছে। তারা দেশকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে চাইছে। তারা জানে তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় লড়াইটা আসবে বাংলা থেকে। তারা জানে তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপসহীন নেতৃত্ব দেবেন বাংলার জননেত্রী। সেই কারণে তারা বাংলাকেই তাদের নিশানা বানিয়েছে। তাই এই দুর্বৃত্তদের ঠেকাতে বাংলার মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। আগামী লোকসভা ভোটে বাংলায় মানুষ রাজনৈতিকভাবে এই দুর্বৃত্তদের নিশ্চিহ্ন করে দেবে। বাংলা থেকে তারা যে ধাক্কা খাবে, তা তাদের উৎখাত করবে গোটা দেশ থেকে। বাংলার মানুষের লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।
This post is also available in: English